“যদি থাকে বন্ধুর মন গাং পার হইতে কতক্ষণ
“যদি থাকে বন্ধুর মন গাং পার হইতে কতক্ষণ
‘প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নাম বন্ধুত্ব’- এমনটাই বলেছেন বিখ্যাত দার্শনিক এমারসন। কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন- ‘যদি থাকে বন্ধুর মন গাং পাড় হইতে কতক্ষণ’।প্রতি বছর আগস্ট মাসের প্রথম রোববার সারা বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় আন্তর্জাতিক বন্ধু দিবস। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কিভাবে এই বন্ধু দিবসের আবির্ভাব হল।

সেই থেকে আগস্ট মাসের প্রথম রোববার এখন বন্ধু দিবস হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে দুনিয়া জুড়ে। ১৯৯৭ সালে জাতিসংঘ বিখ্যাত কার্টুন চরিত্র ‘উইনি দ্য পোহ’কে ‘ওয়ার্ল্ড অ্যাম্বাসেডর অব ফ্রেন্ডশিপ’ মনোনীত করে।
তবে অন্য একটি তথ্য ও প্রচলিত আছে বন্ধু দিবস নিয়ে। তারা বলেন, বন্ধু দিবসের সূচনা হয় ১৯১৯ সালে। তখন আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে কার্ড, ফুল, উপহার ও ফ্রেন্ডশিপ ব্যান্ড বিনিময় করতো। এরপর আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পর্যায়ে বন্ধু দিবসের দিন ও তারিখ পাল্টায়। ১৯৫৮ সালে বিশ্বে শান্তির উদ্দেশ্যে প্যারাগুয়েতে আন্তর্জাতিক নাগরিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেড ৩০ জুলাইকে বিশ্ব বন্ধু দিবস হিসেবে পালন করার প্রস্তাব দেয়। একই সালের ২০ জুলাই ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেডের প্রতিষ্ঠাতা ড. রেমন আর্তেমিও ব্রেঞ্চো বন্ধুদের সঙ্গে প্যারাগুয়ের পুয়ের্তো পিনাসকোতে রাত্রি ভোজনে এ প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সে রাতেই প্রতিষ্ঠা পায় ওয়ার্ল্ড ফ্রেন্ডশিপ ক্রুসেড।
তাদের এ প্রস্তাবনা জাতিসংঘে পেশ করার পর ২০১১ সালের ২৭ জুলাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ৩০ জুলাইকে বিশ্ব বন্ধু দিবস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশ-ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগস্টের প্রথম রোববারকেই বন্ধু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। কোনো কোনো দেশে আবার ৮ এপ্রিল বন্ধু দিবস হিসেবে পালিত হয়।
তবে
আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চাত্যের অনুকরণে বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে
বিশ্ব বন্ধু দিবস। আর বর্তমানে এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বিশ্বের বহু দেশেই।
যাদের প্রতি মুহুর্তের সঙ্গী বন্ধু তারা এক মুহুর্তের জন্যেও মন থেকে
আড়াল করতে পারেন না বন্ধুদের। জীবনের সংকটে এরা ছুটে যান বন্ধুদের কাছে।
আবার আনন্দ, উল্লাস কিংবা দিন শেষের অবসরেও এরা ভালোবাসেন বন্ধুত্বের কলতান
শুনতে। বন্ধুত্বের পরিপূরকসম্পর্কের মাঝে এরা খুঁজে পান জীবন যাপনের ভিন্ন রস।
তবে
প্রথম বন্ধুত্ব কবে হয়েছিল, কীভাবে হয়েছিল সেটি আবিষ্ককার করার চেষ্টা এখন
কেবলই পন্ডশ্রম। তবে আদি পিতা আদমের সঙ্গে তাঁর সঙ্গিনী হাওয়ার সখ্যতাই
আমরা পৃথিবীর প্রথম বন্ধুত্ব হিসেবে ধরে নিতে পারি।
বন্ধু হচ্ছে চাঁদের মতো। চাঁদনী রাতে যেখানেই
যাবো, সঙ্গে যাবে চাঁদ। যতদূরেই হোক, দূর আকাশ থেকে জানান দেবে ‘আমি আছি’।
জীবনে বন্ধু হচ্ছে তৃষ্ণায় এক আজলা শীতল জলের মতো। সময় পাল্টে যায়, তবে
বন্ধুত্ব থাকে অটুট ও বর্তমান।
আবার বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফেসবুক আর ইন্সটাগ্রাম এ প্রজন্মের ফটো অ্যালবাম। ফেসবুক টাইমলাইনে বন্ধুদের সেলফিতে উঠে আসে বন্ধুদের রোজকার নানা গল্প আর খুনসুঁটি।
হ্যাঁ,
প্রায় সবারই বন্ধু আছে আর বন্ধু থাকলেই দেখা হবে, কথা হবে, হবে অনাবিল
আড্ডা । হৃদয়ের সবটুকু আবেগ নিংড়ে, সবটুকু ভালোবাসা দিয়ে যে জায়গায় কথা
বলা যায়, তা হলো বন্ধু আড্ডা । আর এই আড্ডাটা যদি হয় বন্ধুদের একটি বিশেষ
দিনে, তাহলে কোনো কথাই নেই ।
আজ ৭ই আগষ্ট বিশ্ব বন্ধু দিবস ।
সুসময়ে
বন্ধু বটে হয়, অসময়ে কেউ কারো নয়’- এই খনার বচনকে উপেক্ষা করতে পারলেই
প্রকৃত বন্ধুত্ব গড়ে তোলা সম্ভব। যুগ পরিবর্তনের সাথে সাথে বন্ধুত্বের
ধারণাও পাল্টে গিয়েছে বহুলাংশে। যুগ পাল্টালেও বন্ধুত্বের বন্ধন আদি ও
অকৃত্রিম। প্রকৃতির চিরন্তন নিয়মে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে মানুষে-মানুষে,
ছেলে-মেয়েতে, ছাত্র-শিক্ষকে, বাবা-মায়ে, পাড়া-প্রতিবেশীতে। জীবনের পথ
পরিক্রমায় শৈশব, কৈশর, ছাত্রজীবন, কর্মক্ষেত্রে, সংসার ও সমাজ জীবনে
বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে অনেকের সাথে। প্রকৃত ও যোগ্য বন্ধু নির্বাচন একটি সঠিক
সিদ্ধান্ত জীবনের জন্য প্রয়োজন। বন্ধু নির্বাচনে ভুল করলে জীবনে ছন্দ পতন
ঘটে। ছেলে মেয়ে প্রত্যেকেরই উচিত সঠিক ও যোগ্য বন্ধু নির্বাচন করা। যে
যতটুকু ভার বহন করতে পারে, তার ততটুকু বোঝা উত্তলন করা উচিত।
এই দিনে মানুষ বন্ধুদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সময় কাটায়। পরস্পরকে
ফুল, কার্ড, হাতের ব্যান্ড প্রভৃতি উপহার দেওয়া বন্ধু দিবসের রীতি।
বন্ধুত্বের ইতিহাস প্রায় মানব সভ্যতারই সমান বয়সী। যুগ-যুগ ধরে চলে আসা এই
অপূর্ব সম্পর্কটিকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্যই মূলত বন্ধু দিবসের জন্ম।
বন্ধুত্ব তো তা-ই, যাকে নিক্তি দিয়ে মাপা যায় না। প্রকাশ করা যায় না সংজ্ঞা দিয়ে। মানুষ যুগে যুগেই বন্ধুত্বকে উদ্দীপ্ত করেছে।
তবে দিন বা তারিখ যাই হোক, প্রতিটি দিনই বন্ধুত্বের বাঁধন থাকুক অটুট। প্রতিটি দিনই হোক বন্ধু দিবস- “বেঁচে থাকুক বন্ধুত্ব”
সবাইকে বন্ধু দিবসের অকৃত্রিম শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
No comments