Real Bengali Sad Love Story
Real Bengali Sad Love Story
--- তোমার এইজ কত হলো?
--- উম ম ম সার্টিফিকেটেরটা বলব নাকি আসলটা বলব! (কথার মাঝে একটু থেমে) হেই এক্সকিউজ মি ,আপনি আমার বয়স জিজ্ঞাস করলেন?আপনি জানেন না যে,মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই|
--- তো কি ? তুমি তো মেয়ে না|
--- কি ? আমি মেয়ে নই? আর ইউ সিক?
--- আরে ক্ষেপে যাবার কিছু নেই ,আমি তো ঠিক বলেছি| তুমি আমার কাছে মেয়ে নও তুমি আমার fiance ,আই মিন বাগ দত্তা|তাই পড়া প্রতিবেশির মত তোমাকে মেয়ে বলাটা আমার ঠিক পছন্দসই মনে হয়নি|এনিওয়ে আর একটি আইসক্রীমের অর্ডার দিব?
--- নো থ্যাংক্স
(একটু আল্লাদি কন্ঠে রাতুল বল্লো)
--- কি রাগ?
--- নাতো ( অন্যদিকে তাকিয়ে)
--- আচ্ছা বেস খারাপ লাগছে তোমাকে দেখতে,শুনেছি মেয়েরা রাগ করলে অন্য রকম লাগে কিন্তু তোমার বেলায় এমন কেন?
--- মি:রাতুল,আমি রাগ করিনি| ( বলেই সানগ্লাস টি পড়ে নিলো|)
--- মিস নবনি এই এসি রুমে সানগ্লাসটা পড়ার মানে কি? রাগের বহি:প্রকাশ নাকি লুকিয়ে আমাকে দেখা?
এবার সিরিয়াসলি রাগে ফোস ফোস করতে থাকলো নবনি|গ্লাসটা খুলে টেবিলে রেখে এবার রাতুলের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বল্লো,
--- লিসেন,আপনার সাথে আমার বিয়ে কিন্তু এখনো হয়নি|
--- না হয়নি মাত্র ২৪০ ঘন্টা ৪৫ মিনিট ১৭ সেকেন্ড পরে হবে|
---- আগে হোক|
---- হেই ,মানে কি এই কথার! তোমার ফ্যামিলিতে তো কেউ পাগল ছিল না আমি যত টুকু জানি|কিন্তু তুমি .... আমি কনফিউসড |
--- কি বল্লেন? প্লিজ আপনি খালমনি কে ফোন দিন,আমার খারাপ লাগছে ,আমি বাসায় যাব|আপনারা মিলে শপিং করেন|
--- আচ্ছা আচ্ছা সরি এই কান ধরলাম আর মজা করব না|
--- না সরি বলার কিছু নেই,আপনি ফোন দিন|আর খালামনির ও কোন সেন্স নেই|আমাকে একা রেখে চলে গেলো|ফোন ও রিসিভ করছে না| আপনার আপুকে কল দিন উনি তো খালামনির সাথে আছে|
হাতে ফোন নিয়ে রাতুল কয়েক বার ওর বোনের ফোনে কল দেয়|কিন্তু রিসিভ করছে না|রাতুল বুঝতে পেরেছে যে নবনির মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে ,এখন বেশি কিছু বল্লে কেদে ফেলতে পারে অথবা জীদের মাথায় টেবিলের ওপর যা আছে তা ছুড়ে মারতে পারে|পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য রাতুল নবনিকে বল্লো, ---- কিছু মনে না করলে আমি কয়েক মিনিটের জন্য একটু বাইরে যেতে পারি?
--- কেন? আমি একা কি করব তাহলে?
---- ওকে তাহলে যাবো না|
দুই ফ্যামিলির কথায় দুই জনার বিয়ের তারিখ পাকা হয়েছে|এর আগে একে অন্যের ছবি দেখেছে|এনগেজমেন্টের দিন তেমন কোন কথা হয়নি দু জনার|তবে রাতুলের কাছে প্রথম দেখায়ই ভাল লেগেছে নবনি কে|একটু বাচ্চামি স্বভাব নবনির মাঝে কাজ করে|এই ব্যাপারটি রাতুলের বেশ লাগে|তবে নবনির মাঝে সরলতা আর লাজুক স্বভাবটা ও বেস কাজ করে|এনগেইজমেন্টের পর থেকে রাতুল নিবনির সাথে ফোনে কয়েক বার ফোনে কথা বলার চেস্টা করেছে|শুধু মাত্র ওকে বোঝার জন্য,কিন্তু নবনি তেমন পাত্তা দেয় না|ওর স্বভাবটা এমন যে রাতুল ওর সাথে লাইন মারার চেস্টা করছে|প্রথম প্রথম রাতুল বেশ অপমান বোধ করেছে| পরে রাতুলের বোন বুঝিয়েছে যে,নবনির স্বভাব এ বাচ্চামি ভাব আছে| ফোনে নয় সরাসরি কয়েক দিন মিশে দেখ ,বুঝতে পারবি|
ঠিক তাই,প্রথম দিন শপিং এ এসেই রাতুল বুঝতে পেরেছিল|তখন মনে মনে বলতে থাকে -- এই পাগল আমি সামলাবো কেমন করে||তবে ওর বাচ্চামি গুলোর কারনে আরো ভাল লাগা তীব্রতর হয়ে ওঠে|
শপিং এর প্রথম দিন ওর আপুকে বাসায় ফিরে বলে,--- আপু শপিং এর দিন গুলো একটু টেনে টুনে বড়ো করো প্লিজ|
প্রথমে ওর কথা ওর বোন বুঝতে পারেনি| পরে বুঝতে পারে সব জিনিস পত্র যেন দুই দিনের জায়গায় পাচদিনে কেনা হয়|
শপিং এর তৃতীয় দিনে ওদের সন্ধ্যা হয়ে যায়|রাতুলের বোন ও নবনীর খালামনি দুই জনে গাড়ী নিয়ে চলে যায়|তাদের যে কোন জরুরি কাজ আছে এই বলে|নবনি আর রাতুল অনেক ক্ষন সি এন জির জন্য অপেক্ষা করতে করতে অধর্য্য হয়ে রিকসায় রওনা দেয়| যদিও ওদের বাসায় পৌছাতে কয়েক বার রিকসা পরিবর্তন করতে হবে,তবু কিছু করার নেই|
সোডিয়ামের আলোতে অপুর্ব লাগছিল নবনীকে|খোলা চুল গুলো বাতাসে বার বার রাতুলের গাল ছুয়ে যাচ্ছে|রাতুল কথার ফাকে ফাকে বার বার নবনির দিকে তাকাচ্ছে,কখনো লুকিয়ে আবার কখনো বা সরাসরি|নবনি আগের চেয়ে অনেক ফ্রি হয়েছে রাতুলের সাথে|আগের মত আর রেগে রেগে কথা বলে না| খুব ইচ্ছে করছিল রাতুলে নবনির উড়ে আসা চুল গুলো নিজ হাতে সরিয়ে ওর কানের পাশে গুজে দিতে|তবে বেস ভয় ও লাগে নবনিকে,যদি মাইন্ড করে |তাই ইচ্ছা গুলো অপূর্ন ই থেকে যায়|রিকসা যখন স্পীড ব্রেকার ক্রস করে তখন নবনি বেস লাফিয়ে ওঠে| এমনকি যখন রাস্তা ক্রস করার সময় ও দারুন ভয় পায়|
এর মাঝে রিকসা কোন বড় রাস্তা ক্রস করতে যাবার সময় গাড়ি সামনে পড়তেই ঝট করে আমার রাতুলের হাতটা ঝাপটে ধরে|রাতুল ওকে সামলে ধরে বলে,
---ভয় পেয়েছো?
--- একটু
--- আরে ভয়ের কিছু নেই,আমি আছি পাশে|
তখন মুচকি একটা হাসি দেয় নবনি, সেটা একটা স্বস্তির হাসি|যত ক্ষন নবনি পাশা পাশি বসে ছিল রাতুলের,ততক্ষন ওর মাঝে অপূর্ব একটা ভাল লাগা কাজ করছিল|বার বার মনে হচ্ছিল রাস্তাটা যেন আরো বড় হয় অথবা রাস্তার জ্যাম যেন বেশি থাকে|
যখন নবনিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসে রাতুল,তখন ওর বার বার বলতে ইচ্ছে করছিল --- না গেলেই কি নয়?
কিন্তু মনের কথা মনেই রয়ে যায় আর বলা হয় না|ফেরার সময় রাতুলের চারপাশটা নবনির চুলের ঘ্রানে ঘিড়ে রাখে চারপাশ|সেই রাতটা মোহমুগ্ধ হয়ে কাটায় রাতুল|
ধীরে ধীরে রাতুল আর নবনির বিয়ের দিন কাছা কাছি চলে আসে|নবনি মাত্র বিবিএ শেষ করেছে|আর রাতুল বাবার বিজনেস দেখা শুনা করে|সব মিলিয়ে দুই পরিবারের বেশ হৈ হুল্লোড় চলতে থাকে|পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হলে ও ওরা দুই জন ও নিজেদের খুব গুছিয়ে নিয়েছে|
সেই দিন সকালে নবনি ঘুমিয়ে আছে,ফোন রিংটোনে ঘুম ভাংগে|রাতুল কল দিয়েছে,তাই ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা রিসিভ করে নবনি|রাতুল বল্লো---
--- নবনি,একটু আসবে বাইরে প্লিজ|
--- কই আসব?
--- যাস্ট তুমি ফ্লাই ওভারের কাছে মার্কেটের কাছে আসো,আমি তোমার জন্য ওয়েট করব|
--- আসতেই হবে!!ঘুমাচ্ছিলাম তো|
--- বিকেলে ঘুমিয়ো প্লিজ|
--- ওকে ,দেখি|
--- আর শোন,বেসি সময় নিও না আসতে|
---- মানে?
---মানে তুমি নীল ড্রেসটা পড়ে এসো|আর সাজু গুজু করতে হবে না|যেমন আছো তেমন ই চলবে|
নবনি উঠে ফ্রেস হয়ে বের হবার সময় ওর মা বল্লো ড্রাইভার নেই|তাই একটা রিকসা নিয়ে রওনা দেয়|পথ টা খুব বেসি দূরে ছিল না|এর মাঝে রাতুল কে ফোন দিয়ে জানায় যে,ও রওনা করেছে আর পনের মিনিট লাগবে|
দুই ঘন্টা ধরে রাতুল কল করে যাচ্ছে নবনির ফোনে|রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না| কিছু সময় পরে ফোনটা বন্ধ পায়|প্রচন্ড অভিমান হয় রাতুলের| মেয়েটা আমাকে মিথ্যে বল্লো!কিন্তু কেন? আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরে যে আমার জীবন সংগী হবে ,সে কি না ধোকা দিয়ে শুরু করলো|সকাল থেকেই নবনিকে দেখার জন্য অস্থির লাগছিল রাতুলের|তাই ফোন দিয়ে আসতে বলে,সারপ্রাইজ স্বরুপ একটা গিফট কিনে রাখে| যা নবনির প্রিয় একটা জায়গায় গিয়ে দেবার ইচ্ছা ছিল| এই সব কথা ভাবতে ভাবতে রাতুল ওর গাড়ি ঘুড়িয়ে বাসার দিকে যাচ্ছিলো| কেন জানি হ্ঠাৎ ওর মনে অশুভ কিছু হানা দেয়| কোন দূর্ঘটনা....নাহ আর ভাবতে পারছে না রাতুল| গাড়ীটা এক সাইডে রেখে নবনির বাসায় কল করে|বাসা থেকে জানায় ও অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে|
এবার রাতুল রওনা দেয় নবনির বাসার পথে,কোথাও যদি কিছু দেখতে পায়| শেষ মেশ নবনির বাসায় থানা থেকে কল আসে , তখন বিকেল ঘনিয়ে আসছে|
রাতুল ঢাকা মেডিকেলে যখন পৌছায় তখন নবনির পরিবারের সবাই ছিল| নবনির মুখটা নীল রংয়ের ওড়না দিয়ে ঢাকা|যতটুকু শুনেছে ওর রিকসায় পেছন দিয়ে একটি পিক আপ ভ্যান ধাক্কা দেয় | ও ছিটকে ফুটপাতে পড়ে যায়| ব্রেন হেমারাইজ হয় ওর,হাসপাতালে নেবার আগেই ও .....
রাতুল চুপ করে দাড়িয়ে আছে,ওর চোখ বেয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পড়ছে|হঠাৎ রাতুল নবনির চুলে হাত বুলাতে লাগলো|নবনির হাতটা শক্ত করে ধরে রাতুল |তারপর বল্লো, এই নবনি , নবনি শোন তারপর নবনির পাশ থেকে কে জানি সরিয়ে নিয়ে যায় ঠিক ওর মনে নেই|
নবনি নেই কিন্তু রাতুল আছে,বেচে আছে তবে আগের রাতুল নেই|নিজেকে বার বার অপরাধী মনে হয়|কেন ওকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল বার বার|নিজেকে ক্ষমা করতে পারেনা ওই দিনের কথা মনে পড়লে|
কিচ্ছু নেই তবু কিছু স্মৃতি আজো রাতুল কে তাড়িয়ে বেরায়|রাতুলের শুধু এখন অপেক্ষার পালা ..... শুধু হাতটি ধরে বলতে চায়, --- রাগ করো না, আমার আসতে অনেক দেরি হয়েছে||
---ছন্নছাড়া অর্পিতা
উৎসর্গ : আমার বড় বোন , যিনি বিয়ের ছয় দিন আগে রোড একসিডেন্টে মারা গেছেন|
--- তোমার এইজ কত হলো?
--- উম ম ম সার্টিফিকেটেরটা বলব নাকি আসলটা বলব! (কথার মাঝে একটু থেমে) হেই এক্সকিউজ মি ,আপনি আমার বয়স জিজ্ঞাস করলেন?আপনি জানেন না যে,মেয়েদের বয়স জিজ্ঞেস করতে নেই|
--- তো কি ? তুমি তো মেয়ে না|
--- কি ? আমি মেয়ে নই? আর ইউ সিক?
--- আরে ক্ষেপে যাবার কিছু নেই ,আমি তো ঠিক বলেছি| তুমি আমার কাছে মেয়ে নও তুমি আমার fiance ,আই মিন বাগ দত্তা|তাই পড়া প্রতিবেশির মত তোমাকে মেয়ে বলাটা আমার ঠিক পছন্দসই মনে হয়নি|এনিওয়ে আর একটি আইসক্রীমের অর্ডার দিব?
--- নো থ্যাংক্স
(একটু আল্লাদি কন্ঠে রাতুল বল্লো)
--- কি রাগ?
--- নাতো ( অন্যদিকে তাকিয়ে)
--- আচ্ছা বেস খারাপ লাগছে তোমাকে দেখতে,শুনেছি মেয়েরা রাগ করলে অন্য রকম লাগে কিন্তু তোমার বেলায় এমন কেন?
--- মি:রাতুল,আমি রাগ করিনি| ( বলেই সানগ্লাস টি পড়ে নিলো|)
--- মিস নবনি এই এসি রুমে সানগ্লাসটা পড়ার মানে কি? রাগের বহি:প্রকাশ নাকি লুকিয়ে আমাকে দেখা?
এবার সিরিয়াসলি রাগে ফোস ফোস করতে থাকলো নবনি|গ্লাসটা খুলে টেবিলে রেখে এবার রাতুলের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে বল্লো,
--- লিসেন,আপনার সাথে আমার বিয়ে কিন্তু এখনো হয়নি|
--- না হয়নি মাত্র ২৪০ ঘন্টা ৪৫ মিনিট ১৭ সেকেন্ড পরে হবে|
---- আগে হোক|
---- হেই ,মানে কি এই কথার! তোমার ফ্যামিলিতে তো কেউ পাগল ছিল না আমি যত টুকু জানি|কিন্তু তুমি .... আমি কনফিউসড |
--- কি বল্লেন? প্লিজ আপনি খালমনি কে ফোন দিন,আমার খারাপ লাগছে ,আমি বাসায় যাব|আপনারা মিলে শপিং করেন|
--- আচ্ছা আচ্ছা সরি এই কান ধরলাম আর মজা করব না|
--- না সরি বলার কিছু নেই,আপনি ফোন দিন|আর খালামনির ও কোন সেন্স নেই|আমাকে একা রেখে চলে গেলো|ফোন ও রিসিভ করছে না| আপনার আপুকে কল দিন উনি তো খালামনির সাথে আছে|
হাতে ফোন নিয়ে রাতুল কয়েক বার ওর বোনের ফোনে কল দেয়|কিন্তু রিসিভ করছে না|রাতুল বুঝতে পেরেছে যে নবনির মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে ,এখন বেশি কিছু বল্লে কেদে ফেলতে পারে অথবা জীদের মাথায় টেবিলের ওপর যা আছে তা ছুড়ে মারতে পারে|পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য রাতুল নবনিকে বল্লো, ---- কিছু মনে না করলে আমি কয়েক মিনিটের জন্য একটু বাইরে যেতে পারি?
--- কেন? আমি একা কি করব তাহলে?
---- ওকে তাহলে যাবো না|
দুই ফ্যামিলির কথায় দুই জনার বিয়ের তারিখ পাকা হয়েছে|এর আগে একে অন্যের ছবি দেখেছে|এনগেজমেন্টের দিন তেমন কোন কথা হয়নি দু জনার|তবে রাতুলের কাছে প্রথম দেখায়ই ভাল লেগেছে নবনি কে|একটু বাচ্চামি স্বভাব নবনির মাঝে কাজ করে|এই ব্যাপারটি রাতুলের বেশ লাগে|তবে নবনির মাঝে সরলতা আর লাজুক স্বভাবটা ও বেস কাজ করে|এনগেইজমেন্টের পর থেকে রাতুল নিবনির সাথে ফোনে কয়েক বার ফোনে কথা বলার চেস্টা করেছে|শুধু মাত্র ওকে বোঝার জন্য,কিন্তু নবনি তেমন পাত্তা দেয় না|ওর স্বভাবটা এমন যে রাতুল ওর সাথে লাইন মারার চেস্টা করছে|প্রথম প্রথম রাতুল বেশ অপমান বোধ করেছে| পরে রাতুলের বোন বুঝিয়েছে যে,নবনির স্বভাব এ বাচ্চামি ভাব আছে| ফোনে নয় সরাসরি কয়েক দিন মিশে দেখ ,বুঝতে পারবি|
ঠিক তাই,প্রথম দিন শপিং এ এসেই রাতুল বুঝতে পেরেছিল|তখন মনে মনে বলতে থাকে -- এই পাগল আমি সামলাবো কেমন করে||তবে ওর বাচ্চামি গুলোর কারনে আরো ভাল লাগা তীব্রতর হয়ে ওঠে|
শপিং এর প্রথম দিন ওর আপুকে বাসায় ফিরে বলে,--- আপু শপিং এর দিন গুলো একটু টেনে টুনে বড়ো করো প্লিজ|
প্রথমে ওর কথা ওর বোন বুঝতে পারেনি| পরে বুঝতে পারে সব জিনিস পত্র যেন দুই দিনের জায়গায় পাচদিনে কেনা হয়|
শপিং এর তৃতীয় দিনে ওদের সন্ধ্যা হয়ে যায়|রাতুলের বোন ও নবনীর খালামনি দুই জনে গাড়ী নিয়ে চলে যায়|তাদের যে কোন জরুরি কাজ আছে এই বলে|নবনি আর রাতুল অনেক ক্ষন সি এন জির জন্য অপেক্ষা করতে করতে অধর্য্য হয়ে রিকসায় রওনা দেয়| যদিও ওদের বাসায় পৌছাতে কয়েক বার রিকসা পরিবর্তন করতে হবে,তবু কিছু করার নেই|
সোডিয়ামের আলোতে অপুর্ব লাগছিল নবনীকে|খোলা চুল গুলো বাতাসে বার বার রাতুলের গাল ছুয়ে যাচ্ছে|রাতুল কথার ফাকে ফাকে বার বার নবনির দিকে তাকাচ্ছে,কখনো লুকিয়ে আবার কখনো বা সরাসরি|নবনি আগের চেয়ে অনেক ফ্রি হয়েছে রাতুলের সাথে|আগের মত আর রেগে রেগে কথা বলে না| খুব ইচ্ছে করছিল রাতুলে নবনির উড়ে আসা চুল গুলো নিজ হাতে সরিয়ে ওর কানের পাশে গুজে দিতে|তবে বেস ভয় ও লাগে নবনিকে,যদি মাইন্ড করে |তাই ইচ্ছা গুলো অপূর্ন ই থেকে যায়|রিকসা যখন স্পীড ব্রেকার ক্রস করে তখন নবনি বেস লাফিয়ে ওঠে| এমনকি যখন রাস্তা ক্রস করার সময় ও দারুন ভয় পায়|
এর মাঝে রিকসা কোন বড় রাস্তা ক্রস করতে যাবার সময় গাড়ি সামনে পড়তেই ঝট করে আমার রাতুলের হাতটা ঝাপটে ধরে|রাতুল ওকে সামলে ধরে বলে,
---ভয় পেয়েছো?
--- একটু
--- আরে ভয়ের কিছু নেই,আমি আছি পাশে|
তখন মুচকি একটা হাসি দেয় নবনি, সেটা একটা স্বস্তির হাসি|যত ক্ষন নবনি পাশা পাশি বসে ছিল রাতুলের,ততক্ষন ওর মাঝে অপূর্ব একটা ভাল লাগা কাজ করছিল|বার বার মনে হচ্ছিল রাস্তাটা যেন আরো বড় হয় অথবা রাস্তার জ্যাম যেন বেশি থাকে|
যখন নবনিকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসে রাতুল,তখন ওর বার বার বলতে ইচ্ছে করছিল --- না গেলেই কি নয়?
কিন্তু মনের কথা মনেই রয়ে যায় আর বলা হয় না|ফেরার সময় রাতুলের চারপাশটা নবনির চুলের ঘ্রানে ঘিড়ে রাখে চারপাশ|সেই রাতটা মোহমুগ্ধ হয়ে কাটায় রাতুল|
ধীরে ধীরে রাতুল আর নবনির বিয়ের দিন কাছা কাছি চলে আসে|নবনি মাত্র বিবিএ শেষ করেছে|আর রাতুল বাবার বিজনেস দেখা শুনা করে|সব মিলিয়ে দুই পরিবারের বেশ হৈ হুল্লোড় চলতে থাকে|পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হলে ও ওরা দুই জন ও নিজেদের খুব গুছিয়ে নিয়েছে|
সেই দিন সকালে নবনি ঘুমিয়ে আছে,ফোন রিংটোনে ঘুম ভাংগে|রাতুল কল দিয়েছে,তাই ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা রিসিভ করে নবনি|রাতুল বল্লো---
--- নবনি,একটু আসবে বাইরে প্লিজ|
--- কই আসব?
--- যাস্ট তুমি ফ্লাই ওভারের কাছে মার্কেটের কাছে আসো,আমি তোমার জন্য ওয়েট করব|
--- আসতেই হবে!!ঘুমাচ্ছিলাম তো|
--- বিকেলে ঘুমিয়ো প্লিজ|
--- ওকে ,দেখি|
--- আর শোন,বেসি সময় নিও না আসতে|
---- মানে?
---মানে তুমি নীল ড্রেসটা পড়ে এসো|আর সাজু গুজু করতে হবে না|যেমন আছো তেমন ই চলবে|
নবনি উঠে ফ্রেস হয়ে বের হবার সময় ওর মা বল্লো ড্রাইভার নেই|তাই একটা রিকসা নিয়ে রওনা দেয়|পথ টা খুব বেসি দূরে ছিল না|এর মাঝে রাতুল কে ফোন দিয়ে জানায় যে,ও রওনা করেছে আর পনের মিনিট লাগবে|
দুই ঘন্টা ধরে রাতুল কল করে যাচ্ছে নবনির ফোনে|রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ করছে না| কিছু সময় পরে ফোনটা বন্ধ পায়|প্রচন্ড অভিমান হয় রাতুলের| মেয়েটা আমাকে মিথ্যে বল্লো!কিন্তু কেন? আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরে যে আমার জীবন সংগী হবে ,সে কি না ধোকা দিয়ে শুরু করলো|সকাল থেকেই নবনিকে দেখার জন্য অস্থির লাগছিল রাতুলের|তাই ফোন দিয়ে আসতে বলে,সারপ্রাইজ স্বরুপ একটা গিফট কিনে রাখে| যা নবনির প্রিয় একটা জায়গায় গিয়ে দেবার ইচ্ছা ছিল| এই সব কথা ভাবতে ভাবতে রাতুল ওর গাড়ি ঘুড়িয়ে বাসার দিকে যাচ্ছিলো| কেন জানি হ্ঠাৎ ওর মনে অশুভ কিছু হানা দেয়| কোন দূর্ঘটনা....নাহ আর ভাবতে পারছে না রাতুল| গাড়ীটা এক সাইডে রেখে নবনির বাসায় কল করে|বাসা থেকে জানায় ও অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে|
এবার রাতুল রওনা দেয় নবনির বাসার পথে,কোথাও যদি কিছু দেখতে পায়| শেষ মেশ নবনির বাসায় থানা থেকে কল আসে , তখন বিকেল ঘনিয়ে আসছে|
রাতুল ঢাকা মেডিকেলে যখন পৌছায় তখন নবনির পরিবারের সবাই ছিল| নবনির মুখটা নীল রংয়ের ওড়না দিয়ে ঢাকা|যতটুকু শুনেছে ওর রিকসায় পেছন দিয়ে একটি পিক আপ ভ্যান ধাক্কা দেয় | ও ছিটকে ফুটপাতে পড়ে যায়| ব্রেন হেমারাইজ হয় ওর,হাসপাতালে নেবার আগেই ও .....
রাতুল চুপ করে দাড়িয়ে আছে,ওর চোখ বেয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পড়ছে|হঠাৎ রাতুল নবনির চুলে হাত বুলাতে লাগলো|নবনির হাতটা শক্ত করে ধরে রাতুল |তারপর বল্লো, এই নবনি , নবনি শোন তারপর নবনির পাশ থেকে কে জানি সরিয়ে নিয়ে যায় ঠিক ওর মনে নেই|
নবনি নেই কিন্তু রাতুল আছে,বেচে আছে তবে আগের রাতুল নেই|নিজেকে বার বার অপরাধী মনে হয়|কেন ওকে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছিল বার বার|নিজেকে ক্ষমা করতে পারেনা ওই দিনের কথা মনে পড়লে|
কিচ্ছু নেই তবু কিছু স্মৃতি আজো রাতুল কে তাড়িয়ে বেরায়|রাতুলের শুধু এখন অপেক্ষার পালা ..... শুধু হাতটি ধরে বলতে চায়, --- রাগ করো না, আমার আসতে অনেক দেরি হয়েছে||
---ছন্নছাড়া অর্পিতা
উৎসর্গ : আমার বড় বোন , যিনি বিয়ের ছয় দিন আগে রোড একসিডেন্টে মারা গেছেন|
No comments